বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভের (বিওয়াইইআই) উদ্যোগে আজ রাজধানীর গুলশানে হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরিতে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাকসেলারেটিং গ্রিন ইনোভেশন ফর ইয়ুথ অন্টারপ্রেনারশিপ’ এর গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিজয়ী তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে আর্থিক অনুদানসহ পুরষ্কৃত করা হয়।
প্রতিযোগিতার প্রথম পর্যায়ে খুলনা, বরিশাল ও সাতক্ষীরার প্রান্তিক ও বেকার যুবকদের মধ্য থেকে সেরা পাঁচটি আইডিয়াকে নির্বাচন করা হয়েছে। ইলেক্ট্রিক বর্জ্য থেকে সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক ইনভার্টার তৈরির আইডিয়াকে সাথে নিয়ে প্রথম পুরস্কার লাভ করে খুলনা থেকে আসা রাতুল হাসান, তহিদুল ইসলামের দল ‘নেচার প্লাগ’। যাদেরকে ক্রেস্ট ও সনদসহ নগদ দেড় লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।
বরিশাল থেকে আসা সাখাওয়াত আখতার হোসাইন ও মো. সাব্বির হোসেনের দল ‘লুমিনাস বাংলাদেশ’ তাদের কমখরচে এলইডি লাইট উৎপাদনের আইডিয়া নিয়ে দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে। তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে সাতক্ষীরা থেকে আসা মো. তানভীর হাসান ও ইমরান হোসাইনের পল্ট্রি ফিড হিসাবে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ বিটল লার্ভা প্রজনন বিষয়ক উদ্যোগ রেড গোল্ড। ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারি উদ্যোক্তারা পেয়েছেন যথাক্রমে এক লক্ষ টাকা এবং পঁচাত্তর হাজার টাকার আর্থিক অনুদান।
উদ্ভাবনী অনুদানপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার ও স্মারক চেক তুলে দেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব ড. মোঃ আলফাজ হোসেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি) এর পরিচালক জনাব অধ্যাপক মো. মামুন উল হক এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও বাংলাদেশের ‘প্রোগ্রেস’ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা (সিটিএ) পিটার বেলেন। ‘এগিয়ে’-এর সকল বিজয়ীকে ছয় মাসের জন্য তাদের নিজ নিজ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (টিভেট) প্রতিষ্ঠান এবং ফিউচার স্টার্ট-আপ নামক সংস্থার অধীনে তদারকি ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে।
প্রতিযোগিতার বিচারকদলে ছিলেন লাইটক্যাসেল পার্টনার্স এর প্রধান নির্বাহী বিজন ইসলাম, এজ রিসার্চ এন্ড কনসালটিং এর গবেষণা প্রধান ওয়াসিম খান, আইএলও বাংলাদেশ কর্তৃক পরিচালিত ‘প্রোগ্রেস’ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার এ এন এম তানজিল আহসান এবং ওয়াইওয়াই ভেঞ্চার এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাদিয়া হোসেন।
সবুজ উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা ‘এগিয়ে’ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি) এর অর্থায়নে পরিচালিত ‘এমপাওয়ারিং ইয়ুথ ফর গ্রিন ট্রানজিশন’ প্রকল্পের আওতায় বিওয়াইইআই এর গ্রিন স্কিলস প্রোগ্রামের (জিএসপি) একটি অংশ।
জিএসপি প্রকল্পটি মূলত একটি দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি, যা বাংলাদেশের জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ দূষণের এই ত্রিমাত্রিক সংকট মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক যুবকদের সবুজ উদ্ভাবনে সহায়তা করার জন্য কাজ করে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে টেকসই জীবিকা তৈরির জন্য জিএসপি প্রকল্প এই অঞ্চলের তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত। এ বছর প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন অংশীদার ছিল বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি)।
বিওয়াইইআই এর সহ-নির্বাহী পরিচালক সায়েদ মুনতাসির রিদওয়ান বলেন, “এগিয়ে-কে সকল পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, যাতে তৃণমূল পর্যায়ের তরুণরা হাতে কলমে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সবুজ উদ্যোক্তা হবার সুযোগে তাদের দক্ষতা এবং উদ্যমকে কাজে লাগাতে পারে।”
এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন যে “প্রান্তিক যুবকদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং তারা তাদের কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে তৃণমূল অর্থনীতিকে উন্নত করতে এবং ভারসাম্যহীনতা থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে কাজ করতে পারবে, তবে তাদের সমর্থন করার জন্য আমাদের একটি সমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন।”
অতিথির বক্তব্যে জনাব ড. মোঃ আলফাজ হোসেন বলেন “বাংলাদেশ এমন সময়ে তরুণদের মধ্যে তীব্র বেকারত্ব সংকটের মুখোমুখি যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে আসছে। উপরন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ও মৎস্যজীবিতার মত পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল অনেক পেশাই হুমকির মুখে পড়ছে। আমি আশাবাদী যে আমাদের তরুণরা তাদের উদ্ভাবন এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে এই সংকট থেকে আমাদেরকে উত্তোরণ করতে পারবে।”
জনাব অধ্যাপক মো. মামুন উল হক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার উপরে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে যে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হয়েছে এবং এগিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে যে উদ্যোক্তা দের উৎসাহিত করা হয়েছে তা বাংলাদেশে ন্যায্য ও সবুজ অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নরওয়েজিয়ান রেফিউজি কাউন্সিলের পার্টনারশিপ সমন্বয়ক রুবি রেবেকা আরেং, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের রেজিলিয়েন্স এ্যন্ড ক্লাইমেট জাস্টিস বিভাগের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহফুজুর রহমান, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স এবং অক্সফাম এর ক্লাইমেট জাস্টিস এ্যন্ড ন্যচারাল রিসোর্স রাইটস বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার জেরিন আহমেদ।
প্রতিযোগী ৫টি টিম
নিউট্রিফাই: বরিশাল থেকে আসা খাদিজা ইসলাম ও মো. সাইফ
হাঁস-মুরগী ও মাছের ফিড হিসাবে প্রোটিনসমৃদ্ধ ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই প্রজনন ও বাজারজাতকরণ
নেচার প্লাগ: খুলনা থেকে আসা রাতুল হাসান, তহিদুল ইসলাম
ইলেক্ট্রিক বর্জ্য থেকে সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক ইনভার্টার তৈরি
রেটরোপ্লাস্ট: সাতক্ষীরা থেকে আসা শামিম হোসাইন ও আবু বকর সিদ্দীক
প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে নতুন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন
লুমিনাস বাংলাদেশ: বরিশাল থেকে আসা সাখাওয়াত আখতার হোসাইন ও মো. সাব্বির হোসেন
কমখরচে এলইডি লাইট উৎপাদন
রেড গোল্ড: সাতক্ষীরা থেকে আসা মো. তানভীর হাসান ও ইমরান হোসাইন
পল্ট্রি ফিড হিসাবে উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ বিটল লার্ভা প্রজনন